১) প্লাস্টিড: সজীব উদ্ভিদকোষের সাইটোপ্লাজমে বর্ণহীন অথবা বর্ণযুক্ত গোলাকার বা ডিম্বাকার অঙ্গাণুকে প্লাস্টিড বলে। সাধারণত প্রাণিকোষে প্লাস্টিড নেই। এ অঙ্গাণুটি উদ্ভিদকোষের এক অনন্য বৈশিষ্ট্য। প্লাস্টিড উদ্ভিদের খাদ্য সংশ্লেষে, বর্ণ গঠনে এবং খাদ্য সঞ্চয়ে মুখ্য ভূমিকা গ্রহণ করে। রঞ্জক পদার্থের উপস্থিতি ও অনুপস্থিতির উপর নির্ভর করে প্লাস্টিডকে প্রধানত দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে। ক্রোমোপ্লাস্টিড বা বর্ণযুক্ত প্লাস্টিড এবং লিউকোপ্লাস্টিড বা বর্ণহীন প্লাস্টিড। ক্রোমোপ্লাস্টিড দুই রকম- ক্লোরোপ্লাস্ট ও ক্রোমোপ্লাস্ট। এদের মধ্যে তিনটি অংশ পরিলক্ষিত হয়। যথা-আবরণী, স্ট্রোমা এবং গ্রানা। প্লাস্টিডের মধ্যে ক্লোরোপ্লাস্টে সবুজ বর্ণের ক্লোরোফিল নামক রঞ্জক পদার্থ থাকায় সবুজ বর্ণ ধারণ করে। সালোকসংশ্লেষণে সহায়তা করা এর প্রধান কাজ।
চিত্র-২.৩: ক্লোরোপ্লাস্ট
ক্রোমোপ্লাস্ট ফুলের পাপড়ি ও ফলের ত্বকে বিভিন্ন বর্ণবৈচিত্র্য সৃষ্টি করে। সবুজ ফল পাকার সময় ক্লোরোপ্লাস্ট ক্রোমোপ্লাস্টে রূপান্তরিত হয়ে বর্ণবৈচিত্র্য সৃষ্টি করে। টমেটোর যে লাল টকটকে রং দেখ তা এ ক্রোমোপ্লাস্টের লাইকোপেন নামক রঞ্জক পদার্থের জন্য হয়। ক্রোমোপ্লাস্টে লাল, কমলা ও হলুদ বর্ণের ক্যারোটিনয়েড নামক রঞ্জক পদার্থ থাকে।
উদ্ভিদের যেসব অংশে আলো পৌঁছায় না, সেসব অংশের কোষে লিউকোপ্লাস্টিড থাকে। যেমন মূলের কোষের প্লাস্টিড। সূর্যালোকের প্রভাবে এ প্লাস্টিডগুলো রূপান্তরিত হয়ে ক্লোরোপ্লাস্টে পরিণত হয়। তোমরা নিশ্চয় লক্ষ করে থাকবে, যদি সবুজ দূর্বাঘাস ইট দিয়ে কিছুদিন ঢাকা থাকে তবে ঘাসগুলো সাদা হয়ে যায়, কারণ ক্লোরোপ্লাস্টগুলো লিউকোপ্লাস্টে রূপান্তরিত হয়ে যায়। পরবর্তীতে ইট সরিয়ে নিলে সূর্যের আলোয় ঘাসগুলো আবার সবুজ বর্ণের হয়ে যায়। এতে প্রমাণিত হয় যে এক ধরনের প্লাস্টিড রূপান্তরিত হয়ে অন্য ধরনের প্লাস্টিডে পরিণত হয়।
২) মাইটোকন্ড্রিয়া: সজীব উদ্ভিদ ও প্রাণিকোষের সাইটোপ্লাজমে বিক্ষিপ্তভাবে ছড়িয়ে থাকা ছোটো ছোটো দন্ডাকার অঙ্গাণুগুলোকে মাইটোকন্ড্রিয়া বলে (এক বচনে মাইটোকন্ড্রিয়ন)। প্রতিটি মাইটোকন্ড্রিয়ন দ্বিস্তর পর্দা দ্বারা আবৃত থাকে। এর বহিঃপর্দাটি মসৃণ। কিন্তু অন্তঃপর্দাটি আঙুলের মতো অনেক ভাঁজ সৃষ্টি করে। এদেরকে ক্রিস্টি বলে।
জীবের যাবতীয় বিপাকীয় কাজের শক্তির উৎস হচ্ছে মাইটোকন্ড্রিয়া। এ জন্য মাইটোকন্ড্রিয়াকে কোষের 'পাওয়ার হাউস' বলে। সবুজ উদ্ভিদকোষে এর সংখ্যা বেশি তবে প্রাণীর যকৃত কোষে এর সংখ্যা সহস্রাধিক।
৩) গলজি বডি: এগুলো পর্দাঘেরা গোলাকার বা সূত্রাকার নালিকাসমৃদ্ধ অঙ্গাণু যা নিউক্লিয়াসের কাছে অবস্থান করে। উৎসেচক, হরমোন ইত্যাদি ক্ষরণ করা এর কাজ।
৪) এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলাম: সাইটোপ্লাজমে একক ঝিল্লিবেষ্টিত জালিকাকার অঙ্গাণু থাকে যা এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলাম। কোষে মসৃণ ও অমসৃণ এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলাম পাওয়া যায়।
৫) রাইবোজোম: সাইটোপ্লাজমে মুক্ত অবস্থায় বা এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলামের গায়ে দানার মতো রাইবোজোম থাকে। রাইবোজোমে প্রোটিন সংশ্লেষিত হয়।
৬) লাইসোজোম: প্রাণীকোষের সাইটোপ্লাজমে দ্বিস্তরবিশিষ্ট লিপোপ্রোটিনের মেমব্রেনে আবৃত লাইসোজোম থাকে। এটি হাইড্রোলাইটিক এনজাইম ধারণ করে।
৭) সেন্ট্রিওল: প্রাণিকোষের নিউক্লিয়াসের কাছে দুটি ফাঁপা নলাকার বা দন্ডাকার অঙ্গাণু দেখা যায়, তাদের সেন্ট্রিওল বলে, সেন্ট্রিওল সাধারণত একটি স্বচ্ছ দানাবিহীন পদার্থ দ্বারা আবৃত থাকে। এ অবস্থায় এটিকে সেন্ট্রোজোম বলে। উদ্ভিদকোষে সেন্ট্রিওল সাধারণত থাকে না, তবে নিম্নশ্রেণির উদ্ভিদকোষে যেমন-ছত্রাকে থাকে। প্রাণিকোষ বিভাজনের সময় অ্যাস্টার গঠন করা সেন্ট্রিওলের প্রধান কাজ।
৮) কোষগহ্বর: কোষের সজীব অঙ্গাণু এবং নির্জীব বস্তুসমূহ সাইটোপ্লাজমের ধাত্রে থাকে। উদ্ভিদ কোষের নির্জীব বস্তুসমূহের মধ্যে আছে বিভিন্ন রকমের সঞ্চিত পদার্থ, বর্জ্য পদার্থ ও ক্ষরিত পদার্থ। কোষের সাইটোপ্লাজমে তরল পদার্থপূর্ণ (কোষরস) ছোটো-বড়ো গহ্বর থাকে তাদের কোষগহ্বর বলে। প্রাণিকোষে সাধারণত কোষগহ্বর থাকে না তবে কোনো কোনো কোষে যদি থাকে তা আকারে খুব ছোটো। উদ্ভিদকোষে
কোষগহ্বর বেশি থাকে এবং আকারে বড় হয়। এ কারণে উদ্ভিদ কোষে নিউক্লিয়াস একপাশে এবং প্রাণিকোষে নিউক্লিয়াস মাঝে থাকে। নানা প্রকার জৈব অ্যাসিড, লবণ, শর্করা, আমিষ ইত্যাদি কোষ গহ্বরে দ্রবীভূত অবস্থায় থেকে কোষরস প্রস্তুত করে।
কাজ: চিত্র দেখে দলগতভাবে প্রাণী ও উদ্ভিদকোষের মধ্যে পার্থক্যগুলো পোস্টার কাগজে লিখে উপস্থাপন কর। |
গ) নিউক্লিয়াস: প্রোটোপ্লাজমে পর্দা দিয়ে বেষ্টিত সর্বাপেক্ষা ঘন বস্তুকে নিউক্লিয়াস বলে।
প্রতিটি নিউক্লিয়াস চারটি অংশের সমন্বয়ে গঠিত হয়-i. নিউক্লিয়ার মেমব্রেন বা নিউক্লিয়ার পর্দা ii. নিউক্লিওলাস iii. নিউক্লিও জালিকা iv. নিউক্লিওপ্লাজম।
নিউক্লিয়াস-এর ভৌত গঠন পরীক্ষার প্রকৃত সময় কোষ বিভাজন-এর পূর্ব মুহূর্তে ইন্টারফেজ দশায় নিউক্লিয়াসের চারটি অংশ নিচে আলোচনা করা হলো।
i. নিউক্লিয়ার পর্দা সজীব ও দ্বিস্তরবিশিষ্ট পর্দা দিয়ে প্রতিটি নিউক্লিয়াস আবৃত থাকে, তাকে নিউক্লিয়ার পর্দা বলে। নিউক্লিয়ার পর্দা অসংখ্যা ছিদ্রযুক্ত। এসব ছিদ্রের নাম নিউক্লিয়ার রন্ধ্র।
নিউক্লিয়ার পর্দা সাইটোপ্লাজম এর সাথে নিউক্লিয়াসের বিভিন্ন বস্তুর যোগাযোগ রক্ষা করে এবং নিউক্লিয়াসকে রক্ষণাবেক্ষণ করে।
ii. নিউক্লিওপ্লাজম: নিউক্লিয়াসের অভ্যন্তরস্থ নিউক্লিয়ার মেমব্রেন দিয়ে আবৃত স্বচ্ছ, দানাদার ও জেলির মতো অর্ধতরল পদার্থটির নাম নিউক্লিওপ্লাজম বা ক্যারিওলিম্ফ। এটি নিউক্লিওলাস ও ক্রোমোজোমের মাতৃকা বা ধারক হিসেবে কাজ করে এবং নিউক্লিয়াসের জৈবনিক কার্যাবলি নিয়ন্ত্রণ করে।
iii. নিউক্লিওলাস: নিউক্লিয়াসের অভ্যন্তরে অবস্থিত ক্ষুদ্র, গোলাকার, উজ্জ্বল ও অপেক্ষাকৃত ঘন বস্তুটি নিউক্লিওলাস নামে পরিচিত। সাধারণত প্রতি নিউক্লিয়াসে একটি নিউক্লিওলাস থাকে।
iv. নিউক্লিওজালিকা বা ক্রোমাটিন তন্তু নিউক্লিওপ্লাজমে ভাসমান অবস্থায় প্যাঁচানো সুতার মতো খাটো ও মোটা হয়েগঠনটি নিউক্লিওজালিকা বা ক্রোমাটিন জালিকা নামে পরিচিত। কোষ বিভাজনের সময় তত্ত্বময় গঠনটি খাটো ও মোটা হয়ে ক্রোমোজোম হিসেবে দৃশ্যমান হয়।
কাজ: একটি আলু কেটে সামান্য পানিতে কচলিয়ে সে পানির দুই-তিন ফোঁটা অণুবীক্ষণ যন্ত্রে দেখ এবং চিত্রের সাথে মিলাও। এগুলো কি কোষের অঙ্গাণু নাকি অন্য বস্তু? এগুলো কোষের কী? |
নতুন শব্দ -
কোষপর্দা, প্রোটোপ্লাজম, সাইটোপ্লাজম, প্লাস্টিড, মাইটোকন্ড্রিয়া, এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলাম, লাইসোজোম, নিউক্লিক অ্যাসিড ও ক্রোমোজোম।
common.read_more